৩০০টি স্কুলে সারাবছর দুধ পান করাবে এলডিডিপি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠণের উদ্দেশ্যে দেশের ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সারাবছর বিনামূল্যে দুধ পান করানোর কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন উক্ত কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দুধ পান কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: জাকির হোসেন এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব নাহিদ রশীদ, সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জনাব ফরিদ আহাম্মদ, সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনাব শাহ রেজওয়ান হায়াত, মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সভাপতিত্ব করেন ডা: মো: এমদাদুল হক তালুকদার, মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এলডিডিপির প্রকল্প পরিচালক জনাব মো: আব্দুর রহিম ও চিফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ড. মো: গোলাম রব্বানী এবং ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জনাব মো: নজরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, দুধ একটি আদর্শ খাবার। এর মধ্যে আছে শরীরের জন্য খুবই দরকারী শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ ও পানি। শিশুর মেধা বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ল্যাকটোজ একমাত্র দুধেই পাওয়া যায়। শরীরের বৃদ্ধি ঘটানো, শক্তি যোগানো ও মেধা বিকাশে দুধ্যের সমতুল্য আর কোন খাবার গোটা পৃথিবীতে নেই। সরকার তাই শিশুদের জন্য এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপদ ও পুষ্টিকর দুগ্ধজাত পণ্য প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্বাচিত স্কুলগুলোর ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত আগ্রহী সকল শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন ২০০ মিলি লিটার পরিমান ইউএইচটি/পাস্তুরাইজ তরল দুধ পান করানো হবে।
তারা বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে ৩০০টি বিদ্যালয়ে কর্মসূচিটি ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ কার্যক্রম চলবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
জানা যায়, স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশের দরিদ্র অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে শিক্ষার্থীরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে কর্মসূচির নাম, উৎপাদনের তারিখ, বিক্রয়ের জন্য নয় ইত্যাদি তথ্য দেয়া থাকবে। স্বাস্থ্যসম্মত প্যাকেটে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত এ দুধ শতভাগ নিরাপদ এবং দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াকৃত। প্রক্রিয়াজাত কোম্পানীর ল্যাবে দুধের মান ও নিরাপদতা পরীক্ষার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবেও নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে।
বক্তারা বলেন, এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন শিশুদের দুধ পানের আগ্রহ তৈরি হবে, স্বাস্থ্য ভাল হবে ও মেধার বিকাশ ত্বরান্বিত হবে, অপরদিকে তেমনি দেশের দুগ্ধখামারিরা ন্যায্যমূল্য পাবে, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে অধিকতর আগ্রহী হবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে।
কর্মসূচিটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি সমন্বিত গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় স্কুল মিল্ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও-এর তত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও দুধ সরবরাহকারীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে স্কুল মিল্ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি। উভয় কমিটিই নিয়মিত দুধ পান কর্মসূচি তদারকি করবে। এছাড়া, এলডিডিপি থেকে নিয়োজিত প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ ফিল্ড এ্যাসিসটেন্ট ও প্রাণিসম্পদ সার্ভিস প্রোভাইডারবৃন্দ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক সহায়তা করবেন।
নির্বাচিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে এবং দুধ পানের রেজিস্ট্রার নিয়মিত হালনাগাদ ও সংরক্ষণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও অভিভাবকদের জন্য এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও মেধা সংক্রান্ত বেজ লাইন সার্ভে (উচ্চতা, ওজন, আইকিউ) পরিচালনা করা হচ্ছে। দুধ পানের প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে ইফেকটিভনেস স্টাডিও করা হবে।
কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি করে আলাদা আইডি কার্ড দেয়া হচ্ছে। স্কুল খোলা থাকার দিনগুলোতে টিফিন পিরিয়ডে এ দুধের প্যাকেটগুলো পান করার জন্য প্রদান করা হবে। কোন প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না বা অন্যকে দেয়া যাবে না। তাৎক্ষণিকভাবে দুধ খেয়ে খালি প্যাকেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির নিকট ফেরত দিতে হবে।
পুরো কর্মসূচিটি মাঠ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত মনিটর করা হবে। আর এ পাইলট কর্মসূচিটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটিকে টেকসই ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে বলে বক্তারা অনুষ্ঠানে জানান।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দুই শত শিক্ষার্থীকে প্যাকেটজাত দুধ পান করান। দেশের চারটি ইউএইচটি দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৩০০টি স্কুলে দুধ সরবরাহের এ দায়িত্ব পালন করবে।