২৯৯টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) বিতরণ
“শেখ হাসিনার উপহার, প্রাণীর পাশেই ডাক্তার” এই স্লোগানকে ধারন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে ২৯৯টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে একটি করে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক (এমভিসি) প্রদান করেছে। প্রান্তিক খামারিদের দোরগোড়ায় আধুনিক ও জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)-এর আওতায় ঢাকার আগারগাঁওস্থ পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমভিসিগুলো প্রদান করা হয়।
জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকগুলো হস্তান্তর করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, সম্মানিত সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়ার জন্য যেমন এ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হয়, তেমনি পশুপাখির জন্য এই ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক। মানুষকে সহজে বহন করে নেয়া যায়, কিন্তু অসুস্থ এবং বৃহৎ আকারের গবাদিপশু বহন করে হাসপাতালে নেয়া দুরুহ কাজ। তাই জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার ও চিকিৎসা যাতে রুগী তথা অসুস্থ প্রাণীর কাছে যেতে পারে সেজন্যেই এ ক্লিনিক। অর্থাৎ রুগী নয়, বরং ডাক্তারই যাবে রুগীর কাছে।
তিনি আরো বলেন, মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক বা ভ্রাম্যমান প্রাণিচিকিৎসা ক্লিনিক প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো দ্রুততম সময়ে খামারিদের দোরগোড়ায় জরুরি প্রাণিচিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া। ক্লিনিকগুলো দেখতে অনেকটা সাধারণ জিপ গাড়ি বা ডাবল ক্যাবিন পিকাপের মতো। এর দু’টি অংশ রয়েছে। গাড়ির সামনের অংশ চিকিৎসক ও তার সহকারির বসার জন্য এবং পেছনের অংশ অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ ইত্যাদি বহনের জন্য।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের প্রতি মাননীয় মন্ত্রী বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই এমভিসিগুলো সরকার তথা জনগণের ঋণের টাকায় কেনা, এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রার্থীরা যাতে সন্তুষ্ট হয় সেদিকে খেয়াল রেখে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি নবনিযুক্ত চালকদেরকেও আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাড়িগুলোকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করতে হবে, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চালাতে হবে।
বিশষ অতিথির বক্তব্যে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের সাহায্যে একদিকে যেমন দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যাবে, তেমনি একসাথে অধিক সংখ্যক খামারি/খামার/প্রাণীর সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা যাবে। এর ফলে ভুল চিকিৎসা বা বিনা চিকিৎসায় গবাদিপশু মারা যাবার ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। উন্নত জাতের গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর, টার্কি ইত্যাদির খামার বৃদ্ধি পাবে। খামার ব্যবস্থাপনা, মানসম্পন্ন পশুখাদ্য, পশু পরিচর্যা, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এমনকি বাজারজাতকরণ ও দেশে তৈরি প্রাণিজাত খাদ্যের বাজার চাহিদা বৃদ্ধিতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে এখন থেকে কোন খামারি আর নিজেকে একা মনে করবেন না। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। উন্নত জাতের পশুপালনে বা এখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ও উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে। দেশ নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ ও প্রাণিজাত খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জনাব মো. আব্দুর রহিম, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প। মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের উপর একটি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের চীফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী। এছাড়া এমভিসির উপর নির্মিত একটি টিভি বিজ্ঞাপন, একটি প্রামাণ্যচিত্র ও একটি সাফল্যগাঁথা প্রদর্শন করা হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরামর্শক, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা এবং মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক গ্রহণকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও চালকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে দেশে প্রথমবারের মতো এলডিডিপির মাধ্যমে ৬১টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে একটি করে এই মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক প্রদান করা হয়। আজ অবশিষ্ট ২৯৯টি এমভিসি মাঠে প্রেরণের মাধ্যমে প্রকল্পের ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত ৩৬০টির সবকটিই বিতরণ সম্পন্ন হলো।